অর্গানিক চাষাবাদ: টেকসই কৃষির ভবিষ্যত এবং বাংলাদেশে এর সম্ভাবনা
কৃষিবিদ এম এ মনসুর লিয়নঃ অর্গানিক চাষাবাদ এমন একটি কৃষি পদ্ধতি, যেখানে কোনো প্রকার কীটনাশক, রাসায়নিক সার, এন্টিবায়োটিক, হরমোন বা জেনেটিকালি মডিফাইড জাতের ব্যবহার করা হয় না। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে চাষাবাদ করা হয়, যেখানে শুধুমাত্র প্রাকৃতিক বালাইনাশক এবং জৈব সার ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতি পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য অধিক উপকারী, কারণ এতে রাসায়নিক পদার্থের প্রভাব কমে এবং মাটির উর্বরতা দীর্ঘস্থায়ী হয়।
বিশ্বব্যাপী অর্গানিক চাষাবাদের সম্প্রসারণ
বিশ্বব্যাপী অর্গানিক চাষাবাদ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালে, বিশ্বজুড়ে অর্গানিক কৃষিজমির পরিমাণ ছিল ৭৫.৯ মিলিয়ন হেক্টর, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্গানিক কৃষি গবেষণা সংস্থা (IFOAM) এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা, ভারত এবং স্পেনের মতো দেশগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জমিতে অর্গানিক চাষাবাদ হয়। উদাহরণস্বরূপ:
- অস্ট্রেলিয়া: প্রায় ৩৫.৫ মিলিয়ন হেক্টর
- আর্জেন্টিনা: প্রায় ৩.৪ মিলিয়ন হেক্টর
- ভারত: প্রায় ২.৯ মিলিয়ন হেক্টর
- স্পেন: প্রায় ২.৫ মিলিয়ন হেক্টর
মহাদেশভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী:
- ওশেনিয়া: প্রায় ৩৬.০ মিলিয়ন হেক্টর
- ইউরোপ: প্রায় ১৬.৮ মিলিয়ন হেক্টর
- ল্যাটিন আমেরিকা: প্রায় ৮.৫ মিলিয়ন হেক্টর
বর্তমানে, বিশ্বজুড়ে মোট কৃষিজমির প্রায় ১.৬% জমিতে অর্গানিক চাষাবাদ করা হয়। তবে, কিছু দেশ তাদের মোট চাষযোগ্য জমির উল্লেখযোগ্য অংশে অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে। শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- লিচটেনস্টাইন: ৪২%
- অস্ট্রিয়া: ২৭%
- সাও টোমে: ২৫%
- এস্তোনিয়া: ২২%
- সুইডেন: ২১%
২০২০ সালে, বিশ্বে প্রায় ৩.২ মিলিয়ন অর্গানিক কৃষক ছিল, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে, এশিয়ায় ৫২%, আফ্রিকায় ২৮% এবং ইউরোপে ১৪% কৃষক বাস করেন। উদাহরণস্বরূপ, ভারতে প্রায় ১.৪ মিলিয়ন, উগান্ডায় ০.২২ মিলিয়ন এবং ইথিওপিয়ায় ০.২১ মিলিয়ন অর্গানিক কৃষক রয়েছে।
অর্গানিক পণ্যের বাজার বৃদ্ধি
অর্গানিক খাদ্য ও পানীয়ের বিশ্বব্যাপী খুচরা বিক্রয় ২০২০ সালে প্রায় ১১০ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে। এর মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্রে ৪৬.৫ বিলিয়ন ইউরো, জার্মানিতে ১২.২ বিলিয়ন ইউরো এবং ফ্রান্সে ১১.৮ বিলিয়ন ইউরো বিক্রি হয়েছে। COVID-19 মহামারির সময়, অনেক দেশে অর্গানিক পণ্যের বিক্রয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এই খাতের স্থিতিশীলতা ও জনপ্রিয়তা নির্দেশ করে।
বাংলাদেশে অর্গানিক চাষাবাদের ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশে অর্গানিক পণ্যের চাহিদা আগামীতে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে। শহুরে জনগণের স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি ও পরিবেশবান্ধব কৃষির প্রতি আগ্রহের ফলে অর্গানিক পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। তবে, অর্গানিক ফসল উৎপাদনের খরচ প্রথাগত পদ্ধতির তুলনায় বেশি হওয়ায়, এর দামও তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে, সময়ের সাথে সাথে উৎপাদন পদ্ধতি উন্নত হলে এবং কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে, এই খাতের বিকাশ সম্ভব।
সচেতন কৃষকরা অর্গানিক চাষাবাদে বিনিয়োগ করে লাভবান হতে পারেন। এছাড়াও, বায়োপেস্টিসাইড এবং অন্যান্য সম্পর্কিত ব্যবসার বিকাশের মাধ্যমে কৃষি খাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। অর্গানিক চাষাবাদ কেবল কৃষকদের আয় বাড়ায় না, বরং পরিবেশ ও সমাজের জন্যও উপকারী। তাই, টেকসই কৃষির দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অর্গানিক চাষাবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
অর্গানিক চাষাবাদ সচেতনতার মাধ্যমে কৃষকভাইদের অর্গানিক চাষাবাদে আগ্রহী করে তুলতে হবে,তাহলে এর সুফল পাবো আমরা
উত্তরমুছুন( মেহেদী হাসান, বগুড়া)