Header Ads

হাইব্রিড টমেটো চাষের আধুনিক পদ্ধতি !

 কৃষিবিদ এম এ মনসুর লিয়নঃ পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সবজি হচ্ছে টমেটো। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের সকল মানুষের পছন্দের সবজি হচ্ছে টমেটো। টমেটো পাকা এবং কাঁচা দুই অবস্থাতেই সালাদ এবং রান্না করে খাওয়া যায়। এছাড়াও সস, চাটনী, কেচাপ, জুস, পেষ্ট এবং ড্রাই টমেটো হিসেবেও ব্যপক সমাদৃত। টমেটোতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি পাওয়া যায় এছাড়াও প্রচুর পরিমানে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। 

খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ সালে মেক্সিকোতে টমেটো চাষাবাদ শুরু হয় পরবর্তীতে কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কারের পর থেকেই অর্থাৎ ১৫০০-১৬০০ সালে ইউরোপে টমেটো ছড়িয়ে পড়ে। ১৮০০ সালের দিকে পুর্তুগিজদের মাধ্যমে ভারতবর্ষে টমেটো চলে আসে এবং চাষাবাদ শুরু হয়। 

বর্তমানে পৃথিবীতে সবচেয়ে ব্যবহৃত সবজি হচ্ছে টমেটো (আলু ব্যতিত)। সারা পৃথিবীতে বছরে প্রায় ১৯০ মিলিয়ন টন টমেটো উৎপাদিত হয় যার মূল্য প্রায় ১৯০ বিলিয়ন ডলার। টমেটো উৎপাদনে চীন বিশ্বে প্রথম যার বার্ষিক উৎপাদন ৬০ মিলিয়ন টন ।

 টমেটোর আকারঃ

 পৃথিবীতে বিভিন্ন আকারের টমেটো পাওয়া যায় তার মধ্যে গোলাকার, লম্বাটে, টর্পেডো এবং পিয়ার আকারের টমেটো অন্যতম। বাংলাদেশে সাধারনত গোলাকার এবং লম্বাটে টমেটো চাষাবাদ হয়ে থাকে।

টমেটোর রংঃ 

সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন রং য়ের টমেটো পাওয়া যায় যার যেমনঃ লাল, হলুদ, কমলা, কালো, বেগুনী, সাদা, পিংক ইত্যাদি। বাংলাদেশে সাধারনত লাল রংয়ের টমেটো চাষাবাদ হয়ে থাকে। 

 টমেটো গাছের প্রকারভেদঃ

গাছের বৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে টমেটো ৩ প্রকার

 


ডিটারমিনেট বা সবিরত গাছঃ এই ধরনের গাছ সাধারনত ছোট আকারের হয়ে থাকে। গাছে কাছাকাছি সময়ের মধ্যে সকল ফুল চলে আসে এবং এবং কাছাকাছি সময়ের মধ্যে সকল ফল পরিপক্ক হয়ে যায়। যারা আল্প সময়ের মধ্যে গাছে মাচা ছাড়াই টমেটো চাষ করে অন্য ফসল ফলাতে চান তারা এই জাতের টমেটো চাষ করবেন। এই ধরনের গাছ ৩-৪ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। অল্প সময়ের মধ্যে টমেটো চাষ করতে হলে এই জাতের চাষ করতে হবে।

ইনডিটারমিনেট বা অবিরত গাছঃ এই গাছ অনেক লম্বা হয়ে থাকে কোন কোন জাত ১২ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এই গাছে পর্যায়ক্রমে ফুল আসে এবং দীর্ঘ সময় ধরে ফল সংগ্রহ করা যায়। এই ধরনের গাছে একদিকে ফল পরপক্ক হতে থাকে অন্যদিকে ফুল আসতে থাকে। সারা বছর ধরে টমেটো চাষ করেতে এই জাত ব্যবহার করা হয়।

সেমি ইনডিটারমিনেট বা সেমি অবিরত গাছঃ আরো একটি জাত আছে যা এই দুটি জাতের মাঝামাঝি। এই গাছগুলো ৫-৬ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। এই গাছগুলোতেও পর্যায়ক্রমে ফুল আসে এবং ফল পরিপক্ক হয়ে থাকে। 

আমাদের দেশে সাধারনত ডিটারমিনেট বা সবিরত এবং সেমি ইনডিটারমিনেট বা সেমি অবিরত জাতের টমেটো চাষ হয়ে থাকে। তবে আপনি অল্প সময়ের মধ্যে টমেটো চাষ করতে হলে অবশ্যই ডিটারমিনেট বা সবিরত জাতের টমেটো চাষ করবেন। 

হাইব্রিড টমেটো চাষের আধুনিক পদ্ধতি

জমি নির্বাচনঃ

দো-আঁশ এবং বেলে দো-আঁশ মাটি টমেটো চাষের জন্য উপযোগী। টমেটো গাছ পানি সহ্য করতে পারে না তাই সেচ এবং নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত উচু জমি টমেটো চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে।     

জাত নির্বাচনঃ

বাংলাদেশের একেক এলাকায় একেক জাতের টমেটো চাষাবাদ হয়ে থাকে কোথাও গোলাকার আবার কোথাও লম্বাটে।এছাড়াও চাষাবাদের সময় অনুযায়ী জাত আলাদা হয়ে থাকে যেমনঃ গ্রীষ্মকালে গ্রীষ্মকালীন জাত, শীতকালে শীতকালীন জাত এবং আগাম মৌসুমের জন্য আগাম জাত। তাই আপনার এলাকা, চাহিধা এবং চাষের সময় অনুযায়ী টমেটোর জাত নির্বাচন করতে হবে।  
    

হাইব্রীড টমেটোর জাতসমুহঃ   

গোলাকার টমেটোর জাতসমুহঃ 

গ্রীষ্মকালীন জাতঃ বারি-৪ এবং বারি-৮

শীতকালীন আগাম জাতঃ ভি এল-৬৪২, বঙ্গবীর, মহারাজা, মিন্টু সুপার, বিপুল প্লাস, সফল, হিরু প্লাস, মঙ্গলরাজা ইত্যাদি।

শীতকালীন নাবি জাতঃ ব্র্যাক-১৭৩৬,মঙ্গলরাজা, দীপক, দিপালী, বাহুবলী, হিরু, ভি এল-৬৪২, বঙ্গবীর ইত্যাদি।    

লম্বাটে টমেটোর জাতসমুহঃ

শীতকালীন আগাম জাতঃ ব্র্যাক ১৭০১, বিপুল প্লাস, বিউটিফুল, হাইটম, বিজলী, ঝিলিক, উদয়ন,  ইত্যাদি। 

শীতকালীন নাবি জাতঃ  ব্র্যাক ১৭০১, আনখি, বিজলী, হাইটম, ঝিলিক, ইপক ইত্যাদি।

বীজ সংগ্রহঃ

উল্লেখিত জাতগুলোর বীজ প্রায় সকল জায়গায় পাওয়া যায়। বানিজ্যিকভাবে চাষ করলে বীজের গুনগত মান নিশ্চিত করতে অবশ্যই জনপ্রিয় এবং বড় কোম্পানীর বীজ ব্যবহার করতে হবে। সেক্ষেত্রে ব্র্যাক সবসময় বীজের গুনগত মান নিশ্চিত করে থাকে। ব্র্যাকের হাইব্রীড টমেটো ব্র্যাক-১৭৩৬ এবং ব্র্যাক-১৭০১ জাত দুটি অধিক ফলনশীল।    

বীজের পরিমানঃ প্রতি শতাংশে ১-১.২ গ্রাম এবং একর প্রতি.১০০-১২০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন।  

বপন সময়ঃ 

গ্রীষ্মকালীন টমেটোঃ মার্চ-এপ্রিল

আগাম জাতের টমেটোঃ জুলাই-সেপ্টেম্বর

শীতকালীন টমেটোঃ অক্টোবর-ডিসেম্বর 

বীজতলা তৈরিঃ 



হাইব্রীড টমেটো প্রথমে বীজতলায় চারা তৈরি করে পরবর্তীতে মূল জমিতে রোপন করতে হয়। সেইজন্য আদর্শ বীজতলায় চারা উৎপাদন করতে হবে। বীজতলার জন্য ১০ ফুট দৈর্ঘ এবং ৩ ফুট প্রশস্তের বেড তৈরি করতে হবে এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য শীতকালে বেডের উচ্চতা হবে ৩-৪ ইঞ্চি এবং বর্ষাকালে বেডের উচ্চতা হবে ৬-৮ ইঞ্চি। বীজতলার মাটি ভালোভাবে কুপিয়ে মাটির ৩ ভাগের একভাগ গোবর সার মিশিয়ে স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ৭ দিন ঢেকে রেখে সূর্যের তাপের মাধ্যমে মাটি জীবানুমুক্ত করতে হবে। ৭ দিন পর পলিথিন উঠিয়ে আবারো মাটি কুপিয়ে বীজতলায় বীজ বপন করতে হবে। অতিরিক্ত রোদ এবং বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করতে বীজতলায় ছাউনীর ব্যবস্থা করতে হবে।

বীজ বপন পদ্ধতিঃ  

বাজার থেকে বীজ ক্রয় করে ১-২ ঘন্টা হালকা রোদে শুকিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। পরবর্তীতে ৮-১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে বীজ বপন করতে হবে। বীজতলায় দাগ কেটে সারিতে অথবা ছিটিয়ে বীজ বপন করতে হবে তবে খেয়াল রাখতে হবে বীজ যেন কোন অবস্থাতেই ১-১.৫ সেমি এর বেশি মাটির গভীরে না যায়। বীজ মাটির বেশি গভীরে গেলে মাটি ভেদ করে চারা উপড়ে আসতে পারে না। 

মূল জমি তৈরিঃ

প্রতি শতাংশ জমিতে ৮০ কেজি গোবর অথবা জৈব সার এবং ৫০০ গ্রাম জিপসাম ছিটিয়ে আড়াআড়িভাবে কয়েকটি চাষ দিতে হবে। শেষ চাষের সময় ৯০০ গ্রাম টিএসপি, ৬০০ গ্রাম এমওপি, ৫০ গ্রাম জিঙ্ক এবং ৫০ গ্রাম বোরন সার ছিটিয়ে মই দিয়ে জমি সমান করে নিতে হবে।  

চারা রোপন পদ্ধতিঃ 



চারার বয়স ২০-২৫ দিন হলে অথবা চারার ৬টি পাতা হলেই রোপন করতে হবে। মনে রাখতে হবে চারা বয়স বেশি হলে চারা ধকল সহ্য করতে পারে না তাই ফলনও কম হয় তাই কম বয়সি চারা রোপন করতে হবে। মূল জমি তৈরি করার পর সারিতে চারা রোপন করতে হবে। চারা রোপনের ক্ষেত্রে ৩ ফুট বেড তৈরি করে তার উপর মালচিং পেপার বিছিয়ে দিতে হবে। পরবর্তীতে মালচিং পেপার ফুটো করে সারি সারি ২ ফুট এবং চারা থেকে চারা ১.৫ ফুট দূরত্বে রোপন করতে হবে। সেচ এবং পানি নিষ্কাশনের সুবিধার জন্য দুই বেডের মাঝখান ১৮ ইঞ্চি নালা রাখতে হবে। 

সারের উপরি প্রয়োগঃ গাছের ১৫ দিন, ৩০ দিন এবং ৪৫ দিন বয়সে ৬০০ গ্রাম করে ইউরিয়া এবং ২০০ গ্রাম করে এমওপি সার  গাছের গোড়া থেকে একটু দূরে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। মনে রাখবেন গাছের গোড়ায় যেন সার না লাগে কারন গোড়ায় সারের সংস্পর্শে গাছে পচন ধরতে পারে। 

সেচ ও নিষ্কাশনঃ জমিতে প্রয়োজনমত সেচ দিতে হবে। মাটিতে সবসময় জো অবস্থা বজায় রাখতে হবে। মাটি শুকিয়ে গেলে অবশ্যই সেচ প্রদান করতে হবে। টমেটো গাছ পানি সহ্য করতে পারে না তাই অতরিক্ত বৃষ্টিতে জরুরী ভিত্তিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। সেচের কারনে মাটি জমাট বেধে গেলে মাটিতে অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতি হয় তাই গাছের গোড়ায় নিড়ানি দিয়ে মাটির জমাট ভেঙ্গে দিতে হবে।  

পোকামাকড় এবং রোগবালাই দমন

টমেটো গাছে পোকামাকড় এবং রোগবালাইয়ের আক্রমনের ক্ষত্রে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। সঠিক পরিচর্যায় পোকামাকড় এবং রোগবালাইয়ের আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

পোকামাকড়

জাবপোকাঃ জাব পোকা টমেটো গাছের পাতা এবং শাখা প্রশাখার রস শুষে খেয়ে গাছকে দুর্বল করে ফেলে। এরা টমেটোর ভাইরাস স্থানান্তরে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে থাকে। 



দমন পদ্ধতিঃ ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক ১ মিলি ১ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ৫ দিন পর পর স্প্রে করে সম্পুর্ন গাছ ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। 

থ্রিপসঃ এরা পাতার রস খেয়ে গাছকে দুর্বল করে ফেলে। পাতার রস শুষে খাওয়ার ফলে পাতা উপরের দিকে কুকড়ে যায় এবং বিবর্ন হয়ে গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে ফলন কমে যায়। থ্রিপসে আক্রান্ত হলে অনেকে ভাইরাসের আক্রমন বলে ভুল করে থাকে। 


দমন পদ্ধতিঃ ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক ১ মিলি ১ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ৫ দিন পর পর স্প্রে করে সম্পুর্ন গাছ ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। 

হোয়াইট ফ্লাই বা সাদা মাছিঃ সাদা মাছি পাতার রস শুষে খেয়ে গাছকে দূর্বল করে ফেলে। এরা সাধারনত পাতার নীচের দিকে অবস্থান করে। সাদা মাছি টমেটোর পাতা কুকড়ানো ভাইরাস বহন করে থাকে।  



দমন পদ্ধতিঃ ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক ১ মিলি ১ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ৫ দিন পর পর স্প্রে করে সম্পুর্ন গাছ ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। 

ফল ছিদ্রকারী পোকাঃ এরা টমেটোর প্রধান ক্ষতিকারক পোকা। এই পোকার লার্ভা টমেটো ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে টমেটোর ভিতিরের অংশ খেয়ে ফেলে। এছাড়াও টমেটো ছিদ্র করার কারনে ফলে পচন ধরে ফলে ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়।  



দমন পদ্ধতিঃ যেহেতু পোকা ডগা এবং ফলের ভিতরে থাকে তাই এমামেকটিন বেনজয়েট অথবা এমামেকটিন বেনজয়েট + থায়ামেথোক্সাম গ্রুপের কীটনাশক ১ গ্রাম ১ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।


রোগবালাই

টমেটোর মোজাইক ভাইরাস রোগঃ এই ভাইরাসের আক্রমনে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে। এটি টমেটোর প্রধান রোগ। এই রোগের কারনে গাছের পাতা হলদে হয়ে কুকড়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। সদা মাছি, এফিড এবং থ্রিপস এই রোগ ছড়ায়।  এই রোগের কারনে গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গাছে ফল ধরা বন্ধ হয়ে যায়।  

 


দমন পদ্ধতিঃ গাছের ভাইরাস রোগের কোন চিকিৎসা নেই তাই ভাইরাস সহনশীল জাত চাষ করতে হবে। আক্রান্ত গাছ দেখা মাত্রই জমি থেকে উঠিয়ে মাটিতে পুতে ফেলতে হবে। এছাড়াও জাব পোকা, সাদা মাছি এবং থ্রিপস ভাইরাস  বহন করে থাকে তাই নিয়মিত এসব পোকা দমন করতে হবে।

পাতা মোড়ানো ভাইরাসঃ এই রোগের কারনে গাছের পাতা কুকড়ে যায়, পাতা পুরু হয়ে যায় এবং চাপ দিলে মচমচ করে ভেঙ্গে যায়। এই রোগের কারনে  গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে নুডগুলো হতে প্রচুর ছোট ছোট শাখা বের হয় ফলে গাছ ঝোপালো মনে হয়। সদা মাছি, এফিড এবং থ্রিপস এই রোগ ছড়ায়।  এই রোগে গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গাছে ফল ধরা বন্ধ হয়ে যায়। 

দমন পদ্ধতিঃ গাছের ভাইরাস রোগের কোন চিকিৎসা নেই তাই ভাইরাস সহনশীল জাত চাষ করতে হবে। আক্রান্ত গাছ দেখা মাত্রই জমি থেকে উঠিয়ে মাটিতে পুতে ফেলতে হবে। এছাড়াও জাব পোকা, সাদা মাছি এবং থ্রিপস ভাইরাস  বহন করে থাকে তাই নিয়মিত এসব পোকা দমন করতে হবে।

 ছত্রাকজনিত ঢলে পড়া রোগঃ সাধারনত চারা অবস্থায় এই রোগ হয়ে থাকে। বীজতলায় এই রোগ ব্যপকভাবে আক্রমন করে থাকে। এছাড়াও যেকোন বয়সে টমেটোর জমি ব্যপকভাবে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই রোগে গাছের গোড়ায় প্রথমে বাদামী দাগ দেখা যায় পরবর্তীতে এই দাগ বড় হয়ে গাছের গোড়ার চারপাশ বেষ্টন তৈরি করে এবং প্রথমে গাছের বয়ষ্ক ডাল এবং পাতায় লক্ষন প্রকাশ পায় এবং পরবর্তীতে গাছ ঢলেপড়ে মারা যায়। গাছের কান্ড আড়াআড়িভাবে কাটলে ভিতরে ভাস্কুলার বান্ডেলে কালো এবং বাদামী রঙয়ের দাগ দেখা যায়।  এই জীবানু মাটিবাহিত যা মাটিতেই অবস্থান করে। 


 দমন পদ্ধতিঃ কার্বেন্ডাজিম অথবা ডাইফেনোকুনাজল অথবা টেবুকুনাজল+ ট্রাইফ্লক্সিস্ট্রবিন গ্রুপের ছত্রাকনাশক ১ গ্রাম ১ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ৩ দিন পর পর স্প্রে করে গাছের পাতা এবং গোড়া সম্পূর্নভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। 

ব্যাকটেরিয়াজনিত ঢলে পড়া রোগঃ ছত্রাকজনিত এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত ঢলে পড়া রোগের লক্ষন প্রায় একই রকম তাই অনেকে বুঝতে না পেরে ভুল পেষ্টিসাইড ব্যবহার করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই রোগে সুস্থ গাছ  হঠাৎ ঢলে পড়ে এবং গাছের পাতাগুলো সাধারনত সবুজ থাকা অবস্থায় দিনের বেলায় ঢলে পড়ে। সাধারনত কচি ডাল এবং পাতাগুলো আগে নেতিয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে সম্পূর্ন গাছটি ঢলে পড়ে। এই রোগে গাছের ভাস্কুলার ভান্ডেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় তাই পানি ও খাবার গাছের উপরে পৌছাতে পারে না তাই গাছ নেতিয়ে পড়ে। এছাড়াও গাছের আক্রান্ত স্থানে চাপ দিলে পুজের মত বের হয়। এই রোগের জীবানু মাটি বাহিত এবং মাটিতেই অবস্থান করে। 

দমন পদ্ধতিঃ গাছের ব্যাকটেরিয়া রোগের কোন চিকিৎসা নেই তাই আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হবে। যে জমিতে এই রোগ হবে সেই জমিতে পরবর্তী বছর আর টমেটো চাষ করা যাবে না। বেশি আক্রান্ত হলে সেকেন্ডারী ছত্রাকজনিত আক্রমন থেকে রক্ষা পেতে কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক ২ গ্রাম ১ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে গাছের পাতা এবং গোড়া সম্পূর্নভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে।  

 আর্লি ব্লাইট বা আগাম ধ্বসা রোগঃ এই রোগে গাছের বয়স্ক পাতায় এবং কান্ডে প্রথমে কালচে বা বাদামি দাগ পড়ে পরবর্তীতে দাগগুলো বড় হয়ে একত্রিত হয়ে সম্পূর্ন পাতা বা কান্ড পচে গিয়ে ঝরে পড়ে। এছাড়াও ফুলের পুষ্প মুঞ্জরীর বোটা এবং ফলেও আক্রমন করে থাকে। ফলে আক্রমনের ক্ষেত্রে প্রথমে ফলে ছোট ছোট দাগ পড়ে এবং দাগগুলো বড় হয়ে ফল পচে যায়। 

দমন পদ্ধতিঃ মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক ১ গ্রাম/মিলি ১ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে গাছের পাতা সম্পূর্নভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। 

লেট ব্লাইট বা নাবি ধ্বসা রোগঃ এই রোগে গাছের বয়স্ক পাতার কিনারায় প্রথমে ধুসর বাদামি বর্নের পানি ভেজা দাগ পড়ে। দাগগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে সম্পূর্ন পাতা এবং কান্ডে ছড়িয়ে পড়ে সম্পুর্ন গাছটি ঝলসে যায়। এই রোগটি টমেটোর মারাত্তক রোগ। আকাশ মেঘলা, তাপমাত্রা বেশি এবং কুয়াশা বেশি পড়লে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ৪/৫ দিনে জমির অধিকাংশ গাছ ঝলসে যায়। এছাড়াও ফুলের পুষ্প মুঞ্জরী ঝলসে গিয়ে ফুল এবং কচি ফল ঝরে যায়। এই রোগ পাতা এবং কান্ড থেকে ফলেও আক্রমন করে থাকে। ফলে আক্রমনের ক্ষেত্রে প্রথমে ফলে ছোট ছোট দাগ পড়ে এবং দাগগুলো বড় হয়ে ফল পচে যায়। 

দমন পদ্ধতিঃ কার্বেন্ডাজিম+ মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক ১ গ্রাম/মিলি ১ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে গাছের পাতা সম্পূর্নভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। 

 শিকড়ের গিট রোগঃ এই রোগ সাধারনত নেমাটডের আক্রমনে হয়ে থাকে। এই রোগ হলে গাছের শিকড়গুলো ফুলে তসবির মত গিটের আকার ধারন করে । এই রোগে গাছ শিকড়ের মাধ্যমে খাদ্য গ্রহন করতে পারে না ফলে গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় এবং ফলন ব্যপকভাবে কমে যায় ।  

দমন পদ্ধতিঃ যে জমিতে সাধারনত এই সমস্যা দেখা যায় সেই জমিতে শেষ চাষের সময় প্রতি শতাংশে ৫০-৬০ গ্রাম কার্বোফুরান গ্রুপের দানাদার কীটনাশক ছিটিয়ে নেমাটোড দমন করতে হবে।

ফসল সংগ্রহ এবং ফলনঃ উন্নত জাতের হাইব্রিড টমেটো  রোপনের ৬০-৬৫ দিন পর থেকে ফল সংগ্রহ শুরু করা যায়। সঠিক পরিচর্যায় প্রতি শতাংশে ফলন ৪০০-৪৫০ কেজি এবং একরপ্রতি ৪০-৪৫ টন।    

 
 
ধন্যবাদ


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.