Header Ads

মরন নেশা LSD ড্রাগ কি এবং ইহা মানবদেহে কিভাবে কাজ করে ?

 

কৃষিবিদ এম এ মনসুর লিয়নঃ ইদানিং LSD ড্রাগ নিয়ে চারিদিকে হৈচৈ শুরু হয়েছে। ষাটের দশক থেকে উন্নত বিশ্বে এই ড্রাগ অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে এটি নতুন। যদিও বেশ কয়েকবছর যাবত এটি গোপনে এদেশে ব্যবহৃত হচ্ছে তবুও এটি সবার নজরে আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোঃ হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর পর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমান LSD সেবন করে রাস্তার পাশের ডাব বিক্রেতার দা দিয়ে নিজের গলায় আঘাত করে মৃত্যুবরন করে। এই মৃত্যুর তদন্ত করতে গিয়েই বেরিয়ে আসে LSD ড্রাগ চক্রের ভয়ংকর নেটওয়ার্ক। নেশাজাতীয় অন্যান্য দ্রব্যের তুলনায় এর দাম বেশি হওয়ার কারনে বাংলাদেশে এর জনপ্রিয়তা এতদিন কম ছিল। একবার এই ড্রাগ সেবন করলে খরচ করতে হয় ৩০০০-৪০০০ টাকা। অতিরিক্ত দামের কারনে এর ব্যবহার শুধুমাত্র উন্নত বিশ্বেই সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নতির সাথে সাথেই দামি ড্রাগগুলোর দিকে আসক্তরা ঝুকছে। সাধারনত উচ্চবিত্ত ফ্যামিলির সন্তানেরাই এই ড্রাগের প্রধান গ্রাহক। ডেভিট নাটের গবেষনায় দেখা গেছে ২০টি সামাজিক ক্ষতির ড্রাগের মধ্যে LSD তৃতীয়। চলুন আমরা এই ড্রাগ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

LSD ড্রাগ কি ? 


         

LSD হচ্ছে LYSERGIC ACID DIETHYLAMIDE (লাইসারজিক এসিড ডাইথ্যালামাইড) যার গাঠনিক সংকেত C20H25N3O। ইহা একধরনের এসিড যা Ergot (Claviceps purpurea) নামক একধরনের ছত্রাক থেকে তৈরি হয়। Ergot একধরনের ছত্রাক যা রাই, গমসহ অন্যান্য দানাদার ফসলের ক্ষতিকর ছত্রাক হিসেবে পরিচিত। এই ছত্রাক থেকেই ল্যাবরেটিরিতে LSD তৈরি করা হয় যা সাধারনত কৃষ্টাল আকারের হয়ে থাকে এবং পরবর্তীতে তরলে পরিনত করা হয়। ইহা সাধারনত বর্নহীন তিতা সাদযুক্ত পদার্থ।    

Ergot: Claviceps purpurea

Ergot ছত্রাক আক্রান্ত ফসল 

আলবার্ট হফম্যান সুইজারল্যান্ডের স্যান্ডোজ ঔষধ কোম্পানীতে কাজ করার সময় ১৯৩৮ সালে প্রথম ইহা আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে ১৯৫০-১৯৮০ সাল পর্যন্ত এটি মানসিক রোগের রেজিষ্টার্ড ঔষধ হিসেবে Delysid নামে ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে যা ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডে অনুমোদিত ছিল। বর্তমানে বিশ্বের কোথাও এই ড্রাগের অনুমোদন নেই। তবে এটি নেশার জন্য অবৈধভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। বর্তমানে এটি ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, তরল এবং জিলেটিন স্টিকার আকারে পাওয়া যায়। আইন শৃংখলা বাহিনীকে ফাকি দেওয়ার জন্য এটি খুবই নিরাপদ ড্রাগ। LSD দিয়ে একটি পড়ার বইকে সহজেই ড্রাগে রুপান্তর করা যায়। তরল ড্রাগ ব্লটিং পেপারে শোষিত করে সেই কাগজকে ড্রাগ হসেবে ব্যবহার করা যায়। বাংলাদেশে যে ড্রাগটি পাওয়া গেছে তা স্টিকার হিসেবে নেদারল্যান্ড থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে এসেছে। এখানে স্টিকার পেপারকে ড্রাগ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এই স্টিকারের এক এক টুকরাই ড্রাগ হিসেবে ৩০০০-৪০০০ টকায় বিক্রি করা হয়। এটি তরল এবং পেপারের মাধ্যমে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরবরাহের ক্ষেত্রে সহজেই আইনশৃংখলা বাহিনীকে ফাকি দেওয়া যায়। তাছাড়া এই ড্রাগের ডোজ খুবই কম। অন্যান্য ড্রাগ বিশেষ করে হিরোইন, ইয়াবা, ফেন্সিডিল ইত্যাদির ডোজ যেখানে অনেক বেশি সেখানে একবার LSD নেশার জন্য ১ গ্রামের মাত্র ৫০০০০ ভাগের এক ভাগই যথেষ্ট। একজনের নেশার জন্য মাত্র ২০-৮০ মাইক্রোগ্রাম ড্রাগের প্রয়োজন। ডোজ অত্যন্ত কম হওয়ার কারনে সামান্য একটুকরা নিউজপ্রিন্ট কাগজকেউ সহজেই ড্রাগে পরিনত করা যায়। 

LSD যুক্ত জিলেটিন স্টিকার 

LSD ড্রাগ কিভাবে কাজ করে ? 

এই ড্রাগ সরাসরি মানুষের ব্রেইনে প্রভাব ফেলে এবং হ্যালোসিনেশনের সৃষ্টি করে। হ্যালোসিনেশন হলো একধরনের অনুভুতি যা মানুষকে বাস্তবতা থেকে অন্য জগতে নিয়ে যায় যেখানে কাল্পনিক সব বস্তু দেখা যায় এবং শব্দ শুনা যায়। LSD ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল আকারে খাওয়া যায়, তরল আকারে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে নেওয়া যায় অথবা জিলেটিন স্টিকারের ব্লক জিহ্বার উপর রেখে নেশা করা যায়। স্টিকারের ব্লক জিহ্বার উপর রাখলে মাত্র ২০-৩০ মিনিটের মধ্যেই নেশা শুরু হয় যা তরল আকারে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে নিলে মাত্র ১০ মিনিটেই নেশা শুরু হয় এবং ১০-১২ ঘন্টা পর্যন্ত কার্যকর থাকে। এক ডোজে ৩০০ মাইক্রোগ্রাম LSD ব্যবহার করলে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত নেশা কার্যকর থাকে। 

 নেশা কার্যকর হওয়ার সাথে সাথেই শরীরের তাপমাত্রা, ব্লাড প্রেশার এবং হার্টবিট বেড়ে যায় এবং চোখের মনি বড় হয়ে যায় এবং হ্যালোসিনেশনের সৃষ্টি হয়। মানুষ তার চারপাশের সবকিছু অস্বাভাবিক আকারে দেখতে পায় এবং অদ্ভুত শব্দ শুনতে পায়।

 অনেকে আকাশে উড়ে বেড়ায়। চারপাশের সবকিছু ঘুর্নায়মান এবং রং বেরংয়ের মনে হয়। অনেকে আরো বেশি কিছু দেখতে পায় যেমনঃ সামনে কোন প্ররাকৃতিক সৌন্দর্যের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকলে মনে হয় সেখানে বাস্তবে ভেসে বেড়াচ্ছেন অথবা গার্লফ্রেন্ডের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকলে মনে হয় গার্লফ্রেন্ডের সাথে হাত ধরে ঘুরে বেরাচ্ছেন হাসছেন। এই সময় তারা অস্বাভাবিক আচরন করে থাকেন যেমনঃ অযথা হাসি, পা ছুড়াছুড়ি, অস্বাভাবিক হাটাহাটি ইত্যাদি।  

 LSD ড্রাগের ক্ষতিকর প্রভাবঃ

হ্যালোসিনেশনে থাকা অবস্থায় রাস্তায় বা বাসার ছাদে থাকলে ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়াও নিম্নলিখিত ক্ষতিকর প্রভাব পড়েঃ

  • অস্বাভাবিক মানষিক বিকার দেখা দেয়
  • সবসময় বমিবমি ভাব হয়
  • হজমশক্তি কমে যায়
  • ব্লাড সুগার বেড়ে যায়
  • অস্বাভাবিক ঘুম হয়
  • মুখ শুকিয়ে যায়
  • প্রচন্ড হতাশা দেখা দেয়
  • টিউমার বা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে    

 

বিঃদ্রঃ-আসুন আমরা সবাই এই ভয়ংকর ড্রাগ সম্পর্কে সচেতন হই এবং আমাদের সন্তানদের সতর্ক করি। আপনার সন্তান কখন কোথায় যাচ্ছে খোজখবর নিন এবং সবসময় তাদের মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষন করুন।


 

 

 

 

 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.