পৃথিবীর সবচেয়ে দামি গরুর মাংস যার প্রতি কেজির মূল্য ৩৫০০০-৪০০০০ টাকা !
কৃষিবিদ এম এ মনসুর লিয়নঃ মাংস হচ্ছে প্রোটিনের অন্যতম উৎস। পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির পর থেকেই প্রধান খাদ্য ছিল মাংস। পৃথিবীর সকল দেশের সকল জাতি বা উপজাতির মানুষের অন্যতম পছন্দের খাবার হচ্ছে মাংস যার মধ্যে গরুর মাংস অন্যতম। সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় শুকরের মাংস (৩৬%), মুরগীর মাংস (৩৩%) এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে গরুর মাংস (২৪%)। মুসলিম বিশ্বে গরুর মাংসের চাহিধা সবচেয়ে বেশি বিশেষ করে ভারত উপমহাদেশে। সারা পৃথিবীতে গরুর মাংস সহজলভ্য মাংস হিসেবে পরিচিত হলেও জাপানে "কোবে বিফ" নামক একধরনের গরুর মাংস পাওয়া যায় যার প্রতি কেজির মূল্য ৩৫০০০-৪০০০০ টাকা। এই মাংসের স্বাদ নিতে বিত্তবান লোকেরা ছোটে আসেন নামিদামি রেস্তোরায়। চলুন এই মাংস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
![]() |
তাজিন জাতের গরু |
কোবে বিফ কি?
কোবে বিফ হচ্ছে মাংসের একটি জাপানী ব্র্যান্ড যা জাপান সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত। ইহা একধরনের মাংস যা স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মাংস হচ্ছে "কোবে বিফ" যা শুধুমাত্র জাপানের হোয়েগু অঞ্চলে উৎপাদিত হয়। বর্তমানে অষ্ট্রেলিয়া, যুক্ত্ররাষ্ট্র এবং কানাডায় এই জাতের গরু থেকে মাংস উৎপাদিত হলেও জাপানী মাংসের মত গুনগত মানসম্পন্ন নয়। এই মাংসে ক্ষতিকর স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম থাকে তবে মাংসের পরতে পরতে চর্বি থাকে যা শরীরের ক্ষতিকর নয়। এর পরতে পরতে থাকা চর্বিকে মার্বেলিং বলা হয়ে থাকে। যেই মাংসে মার্বেলিংয়ের পরিমান যত বেশি তার দামও তত বেশি। কোবে বিফে প্রচুর পরিমানে মনো স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট হিসেবে ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ থাকে। এই মাংস তুলতুলে এবং অসাধারন স্বাদযুক্ত।
![]() |
মার্বেলিং |
কিভাবে কোবে বিফ তৈরি হয়?
জাপানের হোয়েগু অঞ্চলের ওয়েগু জাতের তাজিমা প্রজাতির কালো গরু থেকে কোবে বিফ তৈরি করা হয়। জন্মের পর এই গরুকে সনাক্তের জন্য ১০ ডিজিটের একটি ট্যাগ লাগানো হয় এবং বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়। ছোটবেলা থেকেই গরুকে দেওয়া হয় পরিমিত সুষম খাবার। গরুর শরীরে যেন চর্বি জমা না হয় সেজন্য প্রতিদিন ম্যাসেজ করা হয়। যত বেশি ম্যাসেজ করা হয় তত গরুর মাংস নরম হয় এবং চর্বি না জমে মাংসে মার্বেলিং হয়। মার্বেলিং বৃদ্ধির জন্য গ্রীষ্মকালে প্রতিদিন ২-৩ লিটার বিয়ার খাওয়ানো হয়। বিয়ার খাওয়ালের গরুর শরীরে চর্বি জমে যা ম্যাসাজের মাধ্যমে মার্বেলিংয়ে রুপান্তরিত করা হয়।
![]() |
গরুকে বিয়ার খাওয়ানো হচ্ছে |
জাপানে বছরে মাত্র ৩০০০ গরু কোবে বিফের জন্য নির্বাচিত করা হয় যা জাপানের মোট গরুর মাত্র .০৬%। সরকারের অত্যন্ত কঠোর তদারকির মাধ্যমে এই মাংস উৎপাদন করা হয়ে থাকে।
কোবে বিফের বৈশিষ্ট্যঃ
- শুধুমাত্র জাপানের হোয়েগু অঞ্চলে পালিত হতে হবে।
- শুধুমাত্র তাজিমা জাতের গরু হতে হবে।
- যেসব গরু বাচ্চা দেয়নি অথবা বলদ গরু হতে হবে।
- সরকারের তত্তাবধানে নির্দিষ্ট জায়গায় জবাই করতে হবে।
- মাংসের কোয়ালিটির জন্য ৪-৫ স্কোর অর্জন করতে হবে যা সাধারনত A4 এবং A5 নামে পরিচিত।
- মার্বেলিংয়ে ১০ স্কোরের মধ্যে কমপক্ষে ৬ অর্জন করতে হবে।
মাংসের ব্যবহার এবং দামঃ
শুধুমাত্র স্টেক বা বার্গারের পেটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে । কোবে বিফ থেকে তৈরি স্টেক পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু স্টেক হিসেবে পরিচিত। এই স্টেক এত নরম এবং রসালো হয় যে জিহ্বায় চাপ দিলেই গলে যায় এবং সর্গিয় স্বাদ অনুভূত হয়। সাধারনত বিত্তবান লোকেরাই এই স্বাদ নিতে পারেন কারন এর দাম সাধারন লোকদের নাগালের বাইরে।
![]() |
কোবে বিফ থেকে তৈরি স্টেক |
সাধারন A5 ক্যাটাগরির কোবে বিফ থেকে তৈরি ১০০ গ্রাম স্টেকের মূল্য ৫০০০-৬০০০ টাকা অর্থাৎ ৫০০০০-৬০০০০ টাকা কেজি যা ১ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। কোবে বিফ দিয়ে তৈরি একটি বার্গের দাম ৫০০০-৬০০০ টাকা। আপনি এই মাংসের স্বাদ নিতে চাইলে জাপান ঘুরে আসতে পারেন।
ধন্যবাদ
thanks mama,new information
উত্তরমুছুন