Header Ads

হাইব্রিড মরিচ চাষের আধুনিক পদ্ধতি !

 

 

কৃষিবিদ এম এ মনসুর লিয়নঃ মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে মরিচ আদিমতম একটি ফসল। খ্রিষ্টপূর্ব ৭৫০০ সাল থেকেই খাবার হিসেবে মরিচ ব্যবহার হয়ে আসছে। মরিচ মেক্সিকোতে উৎপত্তি হয়ে পরবর্তীতে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কারের পর থেকেই মুলত মরিচ ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে পুর্তুগীজদের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ ভারতবর্ষে চলে আসে।  সাধারনত খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি এবং সবজি হিসেবে মরিচ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

 প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে ৩৪.৫ মিলিয়ন টন মরিচ উৎপন্ন হয় এবং ৩.৯ মিলিয়ন টন লাল মরিচের গুড়া উৎপন্ন হয়। পৃথিবীর মোট কাচা মরিচের অর্ধেক চীনে এবং শুকনা মরিচের ৩৬% ভারতে উৎপন্ন হয়ে থাকে। 

পৃথিবীতে হাজারো রকমের মরিচ পাওয়া যায় যার মধ্যে সামান্য কিছু প্রজাতি সারা পৃথিবীব্যপী চাষ হয়ে থাকে। পৃথিবীতে সাধারনত ২ প্রকার মরিচ চাষ হয়ে থাকে।

মিষ্টি মরিচ    






ঝাল মরিচ

মরিচ যদিও খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি এবং সবজি হিসেবে চাষ হয়ে থাকে তবে কিছু মরিচ সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবেও চাষ করা হয়ে থাকে। 

সৌন্দর্যবর্ধক মরিচ

 কাঁচা মরিচে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, বিটা ক্যারোটিন এবং ম্যাঙ্গানিজ বিদ্যমান যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।


হাইব্রিড ঝাল মরিচ চাষের আধুনিক পদ্ধতি

 জমি নির্বাচনঃ

দো-আঁশ এবং বেলে দো-আঁশ মাটি মরিচ চাষের জন্য উপযোগী। মরিচ গাছ পানি সহ্য করতে পারে না তাই সেচ এবং নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত উচু জমি মরিচ চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে।    

জাত নির্বাচনঃ

বাংলাদেশের একেক এলাকায় একেক জাতের মরিচ চাষাবাদ হয়ে থাকে যেমনঃ ময়মনসিংহ এলাকায় ছোট জাতের মরিচ, চট্রগ্রাম এলাকায় লম্বা এবং বগুড়া এলাকায় মাঝারি জাতের মরিচ চাষাবাদ হয়ে থাকে। এছাড়াও কাচামরিচ এবং শুকনা মরিচের জাত সাধারনত আলাদা হয়ে থাকে। সাধারনত যেসব জাত সারাবছর চাষ করা যায় সেসকল জাত নির্বাচন করতে হবে। তাই আপনার এলাকা, চাহিধা এবং চাষের সময় অনুযায়ী মরিচের জাত নির্বাচন করতে হবে।

হাইব্রীড মরিচের জাতসমুহঃ ফায়ার ভলকানো, মধুমতি, বিন্দু, হট মাস্টার, এনএস ১৭০১, বিজলী, বিজলী প্লাস, সনিক, পিকনিক, লঙ্কা ১৮২০ ইত্যাদি।  

বীজ সংগ্রহঃ

উল্লেখিত জাতগুলোর বীজ প্রায় সকল জায়গায় পাওয়া যায়। বানিজ্যিকভাবে চাষ করলে বীজের গুনগত মান নিশ্চিত করতে অবশ্যই জনপ্রিয় এবং বড় কোম্পানীর বীজ ব্যবহার করতে হবে। সেক্ষেত্রে ব্র্যাক সবসময় বীজের গুনগত মান নিশ্চিত করে থাকে। ব্র্যাকের হাইব্রীড ফায়ার ভলকানো এবং মধুমতি জাত দুটি সারা বছর চাষ করা যায় এবং অধিক ফলনশীল।    

বীজের পরিমানঃ প্রতি শতাংশে ২-২.৫ গ্রাম এবং একর প্রতি ২০০-২৫০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন। 

বপন সময়ঃ হাইব্রীড মরিচ সাধারনত সারাবছর চাষ করা যায়। তবে অমৌসুমে বা আগাম চাষ করলে বেশি দামে বিক্রি করা যায়।  

বীজতলা তৈরিঃ হাইব্রীড মরিচ প্রথমে বীজতলায় চারা তৈরি করে পরবর্তীতে মূল জমিতে রোপন করতে হয়। সেইজন্য আদর্শ বীজতলায় চারা উৎপাদন করতে হবে। বীজতলার জন্য ১০ ফুট দৈর্ঘ এবং ৩ ফুট প্রশস্তের বেড তৈরি করতে হবে এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য শীতকালে বেডের উচ্চতা হবে ৩-৪ ইঞ্চি এবং বর্ষাকালে বেডের উচ্চতা হবে ৬-৮ ইঞ্চি। বীজতলার মাটি ভালোভাবে কুপিয়ে মাটির ৩ ভাগের একভাগ গোবরসার মিশিয়ে স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ৭ দিন ঢেকে রেখে সূর্যের তাপের মাধ্যমে মাটি জীবানুমুক্ত করতে হবে। ৭ দিন পর পলিথিন উঠিয়ে আবারো মাটি কুপিয়ে বীজতলায় বীজ বপন করতে হবে। অতিরিক্ত রোদ এবং বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করতে বীজতলায় ছাউনীর ব্যবস্থা করতে হবে।

মরিচের বীজতলা
 

বীজ বপন পদ্ধতিঃ  

বাজার থেকে বীজ ক্রয় করে ১-২ ঘন্টা হালকা রোদে শুকিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। পরবর্তীতে ৮-১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে বীজ বপন করতে হবে। বীজতলায় দাগ কেটে সারিতে অথবা ছিটিয়ে বীজ বপন করতে হবে তবে খেয়াল রাখতে হবে বীজ যেন কোন অবস্থাতেই ১-১.৫ সেমি এর বেশি মাটির গভীরে না যায়। বীজ মাটির বেশি গভীরে গেলে মাটি ভেদ করে চারা উপড়ে আসতে পারে না। 

মূল জমি তৈরিঃ

প্রতি শতাংশ জমিতে ৮০ কেজি গোবর অথবা জৈব সার এবং ৫০০ গ্রাম জিপসাম ছিটিয়ে আড়াআড়িভাবে কয়েকটি চাষ দিতে হবে। শেষ চাষের সময় ৮০০ গ্রাম টিএসপি, ৩০০ গ্রাম এমওপি, ৫০ গ্রাম জিঙ্ক এবং ৫০ গ্রাম বোরন সার ছিটিয়ে মই দিয়ে জমি সমান করে নিতে হবে।  

চারা রোপন পদ্ধতিঃ 

চারার বয়স ২০-২৫ দিন হলে অথবা চারার ৬টি পাতা হলেই রোপন করতে হবে। মনে রাখতে হবে চারা বয়স বেশি হলে চারা ধকল সহ্য করতে পারে কম তাই ফলনও কম হয় তাই কম বয়সি চারা রোপন করতে হবে। মূল জমি তৈরি করার পর সারিতে চারা রোপন করতে হবে। চারা রোপনের ক্ষেত্রে ৩ ফুট বেড তৈরি করে তার উপর মালচিং পেপার বিছিয়ে দিতে হবে। পরবর্তীতে মালচিং পেপার ফুটো করে সারি সারি ২ ফুট এবং চারা থেকে চারা ১ ফুট দূরত্বে রোপন করতে হবে। সেচ এবং পানি নিষ্কাশনের সুবিধার জন্য দুই বেডের মাঝখান ১৮ ইঞ্চি নালা রাখতে হবে।

সারের উপরি প্রয়োগঃ গাছের ২৫ দিন, ৫০ দিন এবং ৭০ দিন বয়সে ৩০০ গ্রাম করে ইউরিয়া এবং ২০০ গ্রাম করে এমওপি সার  গাছের গোড়া থেকে একটু দূরে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। মনে রাখবেন গাছের গোড়ায় যেন সার না লাগে কারন গোড়ায় সারের সংস্পর্শে গাছে পচন ধরতে পারে। 

সেচ ও নিষ্কাশনঃ জমিতে প্রয়োজনমত সেচ দিতে হবে। মাটিতে সবসময় জো অবস্থা বজায় রাখতে হবে। মাটি শুকিয়ে গেলে অবশ্যই সেচ প্রদান করতে হবে। মরিচ গাছ পানি সহ্য করতে পারে না তাই অতরিক্ত বৃষ্টিতে জরুরী ভিত্তিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। সেচের কারনে মাটি জমাট বেধে গেলে মাটিতে অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতি হয় তাই নিড়ানি দিয়ে মাটির জমাট ভেঙ্গে দিতে হবে। 

পোকামাকড় এবং রোগবালাই দমন

মরিচ গাছে পোকামাকড় এবং রোগবালাইয়ের আক্রমন খুব বেশি হয়ে থেকে তাই খুব সতর্ক থাকতে হবে। সঠিক পরিচর্যায় পোকামাকড় এবং রোগবালাইয়ের আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

পোকামাকড়

জাবপোকাঃ জাব পোকা মরিচ গাছের পাতা এবং শাখা প্রশাখার রস শুষে খেয়ে গাছকে দুর্বল করে ফেলে। এরা পাতা কুকড়ানো ভাইরাস স্থানান্তরে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে থাকে। 

দমন পদ্ধতিঃ ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক ১ মিলি ১ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ৫ দিন পর পর স্প্রে করে সম্পুর্ন গাছ ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। 

থ্রিপসঃ এরা পাতার রস খেয়ে গাছকে দুর্বল করে ফেলে। পাতার রস শুষে খাওয়ার ফলে পাতা উপরের দিকে কুকড়ে যায় এবং বিবর্ন হয়ে গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে ফলন কমে যায়। থ্রিপসে আক্রান্ত হলে অনেকে ভাইরাস বা মাইটের আক্রমন বলে ভুল করে থাকে তাই গাছের পাতা ভালোভাবে পর্যবেক্ষেন করে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। 

থ্রিপস আক্রান্ত মরিচ গাছ

থ্রিপস
 

দমন পদ্ধতিঃ ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক ১ মিলি ১ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ৫ দিন পর পর স্প্রে করে সম্পুর্ন গাছ ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। 

হোয়াইট ফ্লাই বা সাদা মাছিঃ সাদা মাছি পাতার রস শুষে খেয়ে গাছকে দূর্বল করে ফেলে। এরা সাধারনত পাতার নীচের দিকে অবস্থান করে। সাদা মাছি মরিচের পাতা কুকড়ানো ভাইরাস বহন করে থাকে। 

সাদা মাছি
দমন পদ্ধতিঃ ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক ১ মিলি ১ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ৫ দিন পর পর স্প্রে করে সম্পুর্ন গাছ ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। 

ফল ছিদ্রকারী পোকাঃ এরা মরিচের প্রধান ক্ষতিকারক পোকা। এই পোকা মরিচের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। এই পোকার লার্ভা মরিচ ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে মরিচের ভিতিরের অংশ খেয়ে ফেলে। এছাড়াও মরিচ ছিদ্র করার কারনে মরিচে পচন ধরে ফলে ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়। 

ফল ছিদ্রকারী পোকা


পোকা দ্বারা আক্রান্ত মরিচ


 দমন পদ্ধতিঃ যেহেতু পোকা ডগা এবং ফলের ভিতরে থাকে তাই এমামেকটিন বেনজয়েট অথবা এমামেকটিন বেনজয়েট + থায়ামেথোক্সাম গ্রুপের কীটনাশক ১ গ্রাম ১ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

মরিচের মাকড়ঃ মরিচ গাছ মাকড় দ্বারা মারাত্নকভাবে আক্রান্ত হয়ে থাকে। অনেকে মাকড় আক্রান্ত গাছকে ভাইরাস আক্রান্ত গাছ হিসেবে চিনতে ভূল করে থাকে। মাকড় দ্বারা আক্রান্ত গাছ এবং ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত গাছ দেখতে প্রায় একই রকম হয়ে থাকে। মাকড় সাধারনত খালি চোখে দেখা যায় না। এরা কচি পাতার রস খেয়ে ফেলে ফলে পাতা বিবর্ন হয়ে নীচের দিকে কুচকে যায়। কচি পাতায় আক্রমনের কারনে গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। সকাল বেলায় গাছের কান্ড ও পাতায় ভালোভাবে লক্ষ করলে মাকড়ের জাল দেখতে পাওয়া যায়।

মাইট

মাইট দ্বারা আক্রান্ত গাছ

 

 দমন পদ্ধতিঃ অনেকে না বুঝে মাকড় দমন করার জন্য বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করে থাকে। মাকড় পোকার পরিবারের না হওয়ার কারনে আপনি যতই কীটনাশক ব্যবহার করেন না কেন তা দমন করতে পারবেন না। তাই প্রথমে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে জমি মাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে কি না। আক্রান্ত প্রাথমিক পর্যায়ে হলে পানিতে দ্রবনীয় সালফার ৫ গ্রাম/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ৩ দিন পর পর ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। আক্রান্ত বেশি হলে এবামেকটিন ১.৮ ইসি ১ মিলি/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ৩ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।  

রোগবালাই

পাতা মোড়ানো ভাইরাসঃ পাতা মোড়ানো ভাইরাস মরিচের প্রধান রোগ যা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। এই রোগের কারনে গাছের পাতা কুকড়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে নুডগুলো হতে প্রচুর ছোট ছোট শাখা বের হয় ফলে গাছ ঝোপালো মনে হয়। সদা মাছি, এফিড এবং থ্রিপস এই রোগ ছড়ায়।  এই রোগে গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গাছে ফল ধরা বন্ধ হয়ে যায়। 

ভাইরাসে আক্রান্ত মরিচ গাছ

দমন পদ্ধতিঃ গাছের ভাইরাস রোগের কোন চিকিৎসা নেই তাই ভাইরাস সহনশীল জাত চাষ করতে হবে। আক্রান্ত গাছ দেখা মাত্রই জমি থেকে উঠিয়ে মাটিতে পুতে ফেলতে হবে। এছাড়াও জাব পোকা, সাদা মাছি এবং থ্রিপস ভাইরাস  বহন করে থাকে তাই নিয়মিত এসব পোকা দমন করতে হবে।

মরিচের ফল পচা বা ডগা মরা রোগঃ এটি মরিচের একটি ছত্রাকজনিত মারাত্বক রোগ। এই রোগে জমিতে প্রচুর মরিচ পচে নষ্ট হয়ে যায়। এই রোগ প্রথমে গাছের কচি পাতা, ডগা, ফলে আক্রমন করে। মরিচের গায়ে প্রথমে ছোট রিং আকারের শুকনা দাগ পড়ে এবং আস্তে আস্তে দাগ বড় হয়ে সম্পূর্ন মরিচ পচে নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে মরিচের বোটা থেকে রোগ গাছের শাখায় ছড়িয়ে পড়ে এবং গাছের কচি শাখা ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে যায়।

রোগে আক্রান্ত মরিচ গাছ

রোগে আক্রান্ত মরিচ

 দমন পদ্ধতিঃ কার্বেন্ডাজিম অথবা প্রপিকুনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক ২ গ্রাম/মিলি ১ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ৫ দিন পর পর স্প্রে করে গাছের পাতা সম্পূর্নভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। 

ছত্রাকজনিত ঢলে পড়া রোগঃ সাধারনত চারা অবস্থায় এই রোগ হয়ে থাকে। বীজতলায় এই রোগ ব্যপকভাবে আক্রমন করে থাকে। এছাড়াও যেকোন বয়সে মরিচের জমি ব্যপকভাবে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই রোগে গাছের গোড়ায় প্রথমে বাদামী দাগ দেখা যায় পরবর্তীতে এই দাগ বড় হয়ে গাছের গোড়ার চারপাশ বেষ্টন তৈরি করে এবং প্রথমে গাছের বয়ষ্ক ডাল এবং পাতায় লক্ষন প্রকাশ পায় এবং পরবর্তীতে গাছ ঢলেপড়ে মারা যায়। গাছের কান্ড আড়াআড়িভাবে কাটলে ভিতরে ভাস্কুলার বান্ডেলে কালো এবং বাদামী রঙয়ের দাগ দেখা যায়।  এই জীবানু মাটিবাহিত যা মাটিতেই অবস্থান করে।

ছত্রাকজনীত ঢলে পড়া রোগে আক্রান্ত জমি 


 দমন পদ্ধতিঃ কার্বেন্ডাজিম অথবা ডাইফেনোকুনাজল অথবা টেবুকুনাজল+ ট্রাইফ্লক্সিস্ট্রবিন গ্রুপের ছত্রাকনাশক ১ গ্রাম ১ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ৩ দিন পর পর স্প্রে করে গাছের পাতা এবং গোড়া সম্পূর্নভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে।

ব্যাকটেরিয়াজনিত ঢলে পড়া রোগঃ ছত্রাকজনিত এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত ঢলে পড়া রোগের লক্ষন প্রায় এক ই রকম তাই অনেকে বুঝতে না পেরে ভুল পেষ্টিসাইড ব্যবহার করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই রোগে সুস্থ গাছ  হঠাৎ ঢলে পড়ে এবং গাছের পাতাগুলো সাধারনত সবুজ থাকা অবস্থায় দিনের বেলায় ঢলে পড়ে। সাধারনত কচি ডাল এবং পাতাগুলো আগে নেতিয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে সম্পূর্ন গাছটি ঢলে পড়ে। এই রোগে গাছের ভাস্কুলার ভান্ডেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় তাই পানি ও খাবার গাছের উপরে পৌছাতে পারে না তাই গাছ নেতিয়ে পড়ে। এছাড়াও গাছের আক্রান্ত স্থানে চাপ দিলে পুজের মত বের হয়। এই রোগের জীবানু মাটি বাহিত এবং মাটিতেই অবস্থান করে। 

ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত গাছ

দমন পদ্ধতিঃ গাছের ব্যাকটেরিয়া রোগের কোন চিকিৎসা নেই তাই আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হবে। যে জমিতে এই রোগ হবে সেই জমিতে পরবর্তী বছর আর মরিচ চাষ করা যাবে না। বেশি আক্রান্ত হলে সেকেন্ডারী ছত্রাকননিত আক্রমন থেকে রক্ষা পেতে কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক ২ গ্রাম ১ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে গাছের পাতা সম্পূর্নভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে।

পাতার দাগ রোগঃ সারকোস্পোরা নামক একপ্রকার ছত্রাকের মাধ্যমে এই রোগ হয়ে থাকে। প্রথমে পাতায় ছোট ছোট গোলাকার আকৃতির দাগ পড়ে এবং দাগগুলো আস্তে আস্তে বড় হয়ে সমস্ত পাতায় ছড়িয়ে পড়ে এবং পাতা ঝরে যায়। 


 দমন পদ্ধতিঃ কার্বেন্ডাজিম অথবা প্রপিকুনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক ১ গ্রাম/মিলি ১ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে গাছের পাতা সম্পূর্নভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে।

শিকড়ের গিট রোগঃ এই রোগ সাধারনত নেমাটডের আক্রমনে হয়ে থাকে। এই রোগ হলে গাছের শিকড়গুলো ফুলে তসবির মত গিটের আকার ধারন করে । এই রোগে গাছ শিকড়ের মাধ্যমে খাদ্য গ্রহন করতে পারে না ফলে গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় এবং ফলন ব্যপকভাবে কমে যায় ।  
নেমাটোড আক্রান্ত গাছের শিকড়

 

নেমাটোড আক্রান্ত গাছ

দমন পদ্ধতিঃ যে জমিতে সাধারনত এই সমস্যা দেখা যায় সেই জমিতে শেষ চাষের সময় প্রতি শতাংশে ৫০-৬০ গ্রাম কার্বোফুরান গ্রুপের দানাদার কীটনাশক ছিটিয়ে নেমাটোড দমন করতে হবে। 


ফসল সংগ্রহ এবং ফলনঃ উন্নত জাতের হাইব্রিড মরিচ রোপনের ৬০-৬৫ দিন পর থেকে মরিচ সংগ্রহ শুরু করা যায়। সঠিক পরিচর্যায় কাঁচা অবস্থায় প্রতি শতাংশে ফলন ১০০-১২০ কেজি এবং একরপ্রতি ১০-১২ টন।  

 
 
ধন্যবাদ

 


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.